আজও বেঁচে আছি
–সুমিত মোদক
এই নাও আমার কাব্য;
এই নাও আমার শব্দ;
এই নাও আমার ব্রহ্ম;
এই নাও আমার রক্ত,
রক্তবীজ,
জিহ্বা;
এই আমি ছড়িয়ে দিলাম আমার শব্দ-ব্রহ্ম
তোমার আকাশে-বাতাসে, জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে …
ভারতবর্ষের হৃদয়ে হৃদয়ে;
আমি ফিরে ফিরে আসি,
ফিরে ফিরে আসবোই এ ভারতবর্ষে,
আমার ভারতবর্ষে;
আমি যুগ, আমি যুগান্তর,
আমি সৃষ্টি, আমি স্রষ্টা,
আমি কবি, আমি নারী,
আমি জ্যোতির্বিদ, আমি শাশ্বত,
আমি বাগসিদ্ধ…
এক নারী, ভারতীয় নারী;
হে বিক্রমাদিত্য, হে সর্বশ্রেষ্ঠ, হে মহান,
আপনি আমাকে সম্মান জানিয়ে আসন দিয়েছেন আপনার রত্ন সভায়;
নবরত্নের সঙ্গে যোগ করেছেন আমাকে;
করেছেন দশম রত্ন;
আমি গর্বিত;
কিন্তু, সেটা কি মেনে নিতে পারলো
আপনার ওই পুরুষতান্ত্রিক নবরত্ন!
মেনে নিতে পারেনি,
মেনে নিতে পারেনি আমার শ্বশুর,
আমার স্বামীও …
কেউ না জানুক, আপনি তো জানতেন
বার বার শুধরে দিয়েছি নবরত্নের ভুল সিদ্ধান্ত;
আপনি মেনে নিয়েছেন প্রতিবার,
ওঁরা পারেন নি;
ওঁদের পুরুষ ষড়যন্ত্রে আজ আমি বলিপ্রদত্ত,
আজ আমি বাগরুদ্ধ,
মৃত্যুর পথযাত্রী …
হে স্বামী, আমি তো একটা সংসার পেতে চেয়ে ছিলাম,
সহজ-সরল-আটপৌরে একটা সংসার;
শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো
একটা সংসার চেয়ে ছিলাম তোমার কাছে …
আমি তো কোনো দিন নাম চাইনি,
খ্যাতি চাইনি, চাইনি যশ …
কেবল আমি সাধনা করে গেছি
রাতের পর রাত জেগে
এ দেশের জন্য, দশের জন্য;
তুমিই আমাকে ঘর থেকে বার করে আনলে প্রকাশ্যে,
স্ত্রীর গুণগান গাইতে;
তুমি রাজসভার নবরত্নের এক রত্ন,
তুমি মিহির;
তোমার জ্যোতিষশাস্ত্র তোমাকে মহান করেছে;
বরাহ আমার শ্বশুর আরেক রত্ন;
কিন্তু, আমাকে দশমরত্ন ঘোষণা করার পর
কেমন যেন সব এলোমেলো হয়ে গেল!
নবরত্নের সিদ্ধান্তগুলো শুধরে দিয়ে আমার সিদ্ধান্তকে
বলবৎ করলেন মহান রাজা বিক্রমাদিত্য;
সেটাই তোমাদের অহংকারে আঘাত হানলো;
আর তুমি, তোমার বাবা, বার বার ভাবতে লাগলে তোমাদের অসম্মান হচ্ছে;
অসম্মান করছি আমি …
তাই তুমি, তোমার বাবা ষড়যন্ত্র করে কেটে নিলে আমার জিহবা;
আমার বাগ্মী স্বাধীনতা;
নারীর বাগ্মী স্বাধীনতা …
হে ভারতবর্ষ, হে আমার জন্মভূমি, হে আমার মাতৃভূমি …
তুমি আজও মনে রেখেছো;
মনে রেখেছো আমাকে;
তোমার প্রথম মহিলা কবিকে;
তোমার প্রথম মহিলা জ্যোতির্বিদকে;
তোমার প্রথম মহিলা কৃষিবিদকে …
তোমার খনাকে;
আমি তাই, আজও বাগসিদ্ধ;
আমি তাই আজও বেঁচে আছি খনার বচন হয়ে।
Adwitiom Bhai